রাম নবমী ও মহা নবমীর পার্থক্য

৩০ মার্চ বৃহস্পতিবার গোটা দেশজুড়ে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার সঙ্গে পালিত হচ্ছে রাম নবমী উৎসব। এই দিনে অযোধ্যার রাজা দশরথের ঘরে ভগবান রাম জন্মগ্রহণ করেন। নবরাত্রি থেকেই এখানে রাম নবমীর প্রস্তুতি শুরু হয়। এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে এই দিনে মর্যাদা পুরুষোত্তম ভগবান রামের আরাধনা করলে সমস্ত মনস্কামনা পূর্ণ হয় এবং সমস্ত অশান্তি দূর হয়। যদিও চৈত্র মাসের রাম নবমী (Chaitriya Ram Navami) এবং শারদীয়া বা বাঙালির দুর্গাপুজোর নবমী (Mahanavami) নিয়ে অনেকের মনে বিভ্রান্তি থাকে। কথিত আছে শারদীয়া নবরাত্রির দশম দিনে মা দুর্গা মহিষাসুরকে বধ করেন এবং ভগবান রাম রাবণকে বধ করেন। সনাতন ধর্মে উভয়েরই আলাদা আলাদা গুরুত্ব রয়েছে।

একদিকে যেখানে চৈত্র নবরাত্রির দিন রাবণ বধের জন্য ভগবান রাম পৃথিবীতে অবতারণা করেছিলেন, অন্যদিকে শারদীয় নবরাত্রির নবমী তিথিতে রাবণ বধের আগে ভগবান রাম মা দুর্গার পুজো করেছিলেন। আসুন জেনে নেওয়া যাক চৈত্র মহানবমী এবং শারদীয় মহানবমীর মধ্যে পার্থক্য কী?

পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, চৈত্র নবমীর দিনে মর্যাদা পুরুষোত্তম ভগবান রাম  জন্মগ্রহণ করেছিলেন। অন্যদিকে, শারদীয়া নবরাত্রির দিন রাবণ বধের আগে ভগবান শ্রীরাম মা ভগবতীর আরাধনা করেছিলেন এবং মা প্রসন্ন হয়ে ভগবান রামকে যুদ্ধ জয়ের আশীর্বাদ করেছিলেন। শারদীয় নবরাত্রির দিন দেবী ভগবতীর পুজো করা হয়। বিশ্বাস করা হয় এই দিনে মা দুর্গা (Durga) মহিষাসুরকে (Mahishasura) বধ করেন। আবর রাবণকে (Ravan) বধ করে অত্যাচার থেকে তিন জগৎকে রক্ষা করেছিলেন রাম।

রাম নবমী ও শারদীয়া নবমী দুটো আলাদা বিষয় বলে জানিয়েছেন বিখ্যাত পুরাণবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি। তিনি জানান, রাম নবমীতে ভগবান রাম জন্মেছিলেন বলে বিশ্বাস করা হয় প্রাচীন কাল থেকেই। চৈতন্য মহাপ্রভু নির্দেশিকা দিয়েছিলেন গৌড়ীয় বৈষ্ণবদের কী কী তিথি পালন করতে হবে, তার মধ্যে রয়েছে এই রাম নবমী।

তাহলে কি রাম নবমী ও দুর্গাপুজোর নবমীর মধ্যে কোনও মিল আছে? উত্তরে নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি বলেন, \'নবমী দিন ও তিথিতে প্রভু রামের জন্ম হয়েছিল। আমাদের বাঙালিদের দুর্গাপুজো চারদিনের হয়। সেখানে সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী ও দশমী রয়েছে। সেটা আলাদা নবমী। আর অকাল বোধনের বিষয়টা আছে কৃত্তিবাসী রামায়ণে। সেখানে বলা আছে, রামচন্দ্রকে অনুগ্রহ করার জন্য় ও রাবণ বধের জন্য ব্রহ্মা রাত্রিবেলা দেবীর বোধন করেছিলেন। সেই সময় দক্ষিণায়ণ চলছিল, যা দেবতাদের রাত্রি। সেই সময় তিনি বোধন করেছিলেন বলে অকাল বোধন বলা হয়। স্মার্তবিধান বা অন্য আমাদের যা পূরাণ আছে, সেই অনুযায়ী নবমী তিথিতে দেবী জাগ্রত হন। তাঁর মায়াবলে রাম ও রাবণের যুদ্ধ শুরু হয়। সেই যুদ্ধে রাবণ নবমীর দিনই মারা যান। যদিও কৃত্তিবাসী রামায়ণে এসব বর্ণনা নেই। সেখানে আছে, রাবণের সঙ্গে যুদ্ধ করতে গিয়েছিলেন দশমীর দিন। ওইদিনই রাবণের বধ হয়েছিল। সেই কারণেই বিজয় পালন করা হয় দশমীতে।\'


 

Comments.

Leave a Comment.

Share this pen