‘চাঁদের পাহাড়’-এ সফল অবতরণ ভারতের চন্দ্রযান-৩-এর, ইতিহাসের সাক্ষী দেশবাসী

23 অগস্ট, বুধবার চাঁদের মাটিতে সফ্ট ল্যান্ডিং করল চন্দ্রযান-3। কথা মতোই এদিন সন্ধে 6টা 4-এ চাঁদের মাটি স্পর্শ করল মহাকাশযানটি। এককথায় হাতের মুঠোয় চাঁদ ধরে ফেলল ভারত। বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পা রাখল ভারত।

ইসরো ৫টি ২০ মিনিট থেকে লাইভ সম্প্রচার আরম্ভ করে। অবতরণের প্রক্রিয়াটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে ইসরোর ইউটিউব চ্য়ানেল ও ফেসবুক পেজে। ৫টা ৪৭ মিনিট থেকে ৬ টা বেজে ৪ মিনিট পর্যন্ত কঠিন পর্যায়টি হেসে-খেলেই উতরে গিয়েছে চন্দ্রযান-৩। ১৫ মিনিটের এই পর্যায়টি ছিল সবথেকে আতঙ্কের। তবে সেই আতঙ্কের মেঘ সরেছে। ঘড়ির কাঁটায় যখন ৬টা ৪ ঠিক তখনই তৈরি হল সেই ঐতিহাসিক মুহূর্ত। হাসতে হাসতে চাঁদের বুকে বীরদর্পে নেমে পড়ল চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডার 'বিক্রম'। গতি কমিয়ে নামানো হয় ল্যান্ডার 'বিক্রম'-কে। আর এই মিশনের মাধ্যমেই বিশ্বের দরবার ভারতের মহাকাশ গবেষণার অগ্রগতি আরও জোরদার ভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত হল। ৩০ কিলোমিটার উচ্চতা থেকে চাঁদের পৃষ্ঠে অবতরণে 'বিক্রম'-এর সময় লেগেছে মোটামুটি ১৯ মিনিট। এই ১৯ মিনিটে ধাপে ধাপে তার গতি এবং উচ্চতা কমানো হয়েছে সেটির। এই পর্যায়ে কাজ করেছে একাধিক ক্যামেরা এবং সেন্সর। দেশের নানা প্রান্তে এই অভিযানের সাফল্য কামনা করে যাগযজ্ঞ হয়েছে। কেউ পড়ছেন নমাজ, কেউ আবার বিশেষ পুজোর আয়োজন করেছেন। প্রার্থনা একটাই, চার বছর আগের ব্যর্থতার গ্লানি এবার ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ব্রিক্‌স সম্মেলনে যোগ দিতে দক্ষিণ আফ্রিকায় রয়েছেন। বুধবার সেখান থেকেই তিনি 'বিক্রম'-এর অবতরণ প্রত্যক্ষ করেন। ইসরোর সরাসরি সম্প্রচারে চোখ রাখেন মোদী।


চন্দ্রযান-থ্রির ‘বিক্রম’ নামক ল্যান্ডারটি চাঁদের বুকে সফলভাবে নামতেই ইসরোর মিশন সেন্টারে বিজ্ঞানীরা আনন্দে চিৎকার করে ওঠেন, পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে তারা অভিনন্দন জানাতে থাকেন। সোশ্যাল মিডিয়া ভেসে যায় শুভেচ্ছা আর অভিনন্দনের বার্তায়।

এর আগে ২০১৯ সালে ভারতের চন্দ্রযান-টু মহাকাশযান চাঁদের বুকে সফট ল্যান্ডিংয়ের লক্ষ্য অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছিল। প্রায় চার বছর বাদে এসে চন্দ্রযান-থ্রি কিন্তু সেই লক্ষ্যে পুরোপুরি সফল হল।

এই অভিযানের আর একটি বৈশিষ্ট্য হল এটি অবতরণ করেছে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে, যেখানে সম্প্রতি জলের অস্তিত্ত্ব প্রমাণিত হওয়ার পর সারা পৃথিবী জুড়ে বিজ্ঞানীদের আগ্রহ ও মনোযোগ এখন চন্দ্রপৃষ্ঠের ওই অঞ্চলটিতেই।

এই সফট ল্যান্ডিংয়ের পর এখন পরবর্তী ১৪ দিন (যেটা এক চান্দ্র দিবসের সমান) ধরে চন্দ্রযান-থ্রির মুন রোভার ‘প্রজ্ঞান’ চাঁদের বুক থেকে নানা ছবি ও ডেটা পাঠাতে থাকবে।

চোদ্দ দিন পর প্রজ্ঞান রোভারের সক্রিয়তা ধীরে ধীরে কমে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর কারণ এটির শক্তির উৎস হল সৌরশক্তি চালিত সোলার সেল – আর একটা পর্যায়ের পর ওই সেলগুলো সূর্যালোকের আড়ালে চলে যাবে।

এই দুসপ্তাহের মধ্যে চন্দ্রযান-থ্রি পর্যায়ক্রমিকভাবে একটার পর একটা পরীক্ষানিরীক্ষা চালাবে। যার মধ্যে চন্দ্রপৃষ্ঠে কী কী ধরনের খনিজ পদার্থ আছে, তার একটি স্পেক্ট্রোমিটার অ্যানালিসিসও থাকবে।

ইসরোর অধিকর্তা, মহাকাশবিজ্ঞানী এস সোমনাথের কথায়, “আমাদের প্ল্যান এ কোনও কারণে বানচাল হলে তার জন্য প্ল্যান বি প্রস্তুত ছিল। এমন কী সেই ব্যাকআপেরও ব্যাকআপ তৈরি ছিল!”

এই মহাকাশযানের মোট তিনটি অংশ ছিল : একটি ল্যান্ডার মডিউল (এল এম), একটি প্রোপালশন মডিউল (পিএম) আর একটি রোভার।

বিক্রম নামে এই রোভারের নামকরণ করা হয়েছিল ভারতের প্রবাদপ্রতিম মহাকাশ বিজ্ঞানী বিক্রম সারাভাইয়ের নামানুসারে। ইসরোর প্রতিষ্ঠাতা বিক্রম সারাভাইকে ভারতের মহাকাশ চর্চার পথিকৃৎ বলেও গণ্য করা হয়। মৃত্যুর বাহান্ন বছর বাদে সেই বিক্রম সারাভাইয়ের নামাঙ্কিত মুন রোভারই ভারতকে মহাকাশচর্চার ইতিহাসে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিল।

Comments.

Leave a Comment.

Share this pen